Thursday, October 2, 2025

মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যে মিলল স্বর্ণ চোরাচালান চক্র

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের সঙ্গে প্রতারণা, ভারতে স্বর্ণ চোরাচালান, হুন্ডি ও ৬০৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলাটি করেছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

আসামিরা হলেন– মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাস, ওয়াহিদুজ্জামান, গোলাম সারওয়ার আজাদ, তরিকুল ইসলাম ওরফে রিপন ফকির, রাজীব সরদার ও উজ্জ্বল কুমার সাধু। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।

সিআইডি জানায়, ২০২২ সালে বাংলাদেশি চক্রের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিক প্রতারণার শিকার হন বলে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডিকে জানায়। এর পর সিআইডির তদন্তে উঠে আসে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ডেবোরাহ জন্সটন রামলো ওরফে ডেবির সঙ্গে বাংলাদেশি প্রতারক চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন মাধ্যমে সখ্য গড়ে। পরে নিজেদের অবৈধ মাদক পাচারবিরোধী সংস্থার (ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি) সদস্য পরিচয় দিয়ে তারা ফাঁদে ফেলে ডেবির কাছ থেকে দুই লাখ ২২ হাজার মার্কিন ডলার হাতিয়ে নেয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আসামিরা ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ওই অর্থ নেয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এর পর তা দেশটির বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দেয়। পরে বাংলাদেশে অবস্থানরত ওই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা করে চক্রের সদস্যরা। আসামিরা সংঘবদ্ধ প্রতারণা ছাড়াও দীর্ঘদিন হুন্ডি কার্যক্রমে জড়িত।

সিআইডির অনুসন্ধানে এসেছে, আইনক্স ফ্যাশন, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ, জামান এন্টারপ্রাইজ ও নোহা এন্টারপ্রাইজের ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা করা হয়েছে। এর মধ্যে ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের নামে চারটি এবং আইনক্স ফ্যাশন, জামান এন্টারপ্রাইজ ও নোহা এন্টারপ্রাইজের নামে একটি করে ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব হিসাবে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অর্থ লেনদেন হয়েছে। এর বাইরে আসামি মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের ব্যাংক হিসাবেও অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

সিআইডি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ডেবি প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ অনুসন্ধানে চক্রের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালানের তথ্য পাওয়া যায়। তারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশে আসা প্রবাসী, ঢাকার তাঁতীবাজারসহ বিভিন্ন স্বর্ণের দোকান থেকে ভাঙাড়ি স্বর্ণ সংগ্রহ করে গলিয়ে বার তৈরির মাধ্যমে দীর্ঘদিন তা ভারতে পাচার করে আসছে। এসব সোনার বার মূলত সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করা হয়।

এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে আসামিরা ৬০৮ কোটি ৩৩ লাখ ৩০ হাজার ৩৭২ টাকা হস্তান্তর ও রূপান্তর করে ভোগ-বিলাস, পাচারসহ নামে-বেনামে সম্পত্তির মালিক হয়েছে। আসামিদের আইনের আওতায় আনতে সিআইডির তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

শ্যাম ঘোষের ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক
স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে অর্জন করা ব্যবসায়ী শ্যাম ঘোষের ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক করেছে সিআইডি। গতকাল বুধবার সিআইডি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়, তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত শ্যাম ঘোষের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন ঢাকার সিনিয়র মহানগর স্পেশাল জজ আদালত।
স্বর্ণ চোরাকারবারের অভিযোগে শ্যাম ঘোষের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি ঢাকার কোতোয়ালি থানায় অর্থ পাচার আইনে মামলা হয়। এ ঘটনায় সিআইডির তদন্তে উঠে আসে, স্বর্ণ ব্যবসায়ী শ্যাম ঘোষ

ঢাকার সূত্রাপুরে একটি
স্বর্ণের দোকানে চাকরির আড়ালে চোরাই কারবারে জড়িয়ে পড়েন। এর মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হন তিনি। শ্যাম ঘোষ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে একাধিক দোকান ও ফ্ল্যাট কিনেছেন। এর মধ্যে শ্যাম ঘোষের রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের সি-ব্লকের ষষ্ঠতলায় তিনটি দোকান, একই স্থানে ‘ইন্ডিয়ান ডোমেস্টিক স্পাই’ নামে রেস্টুরেন্ট, পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে ‘বাবুলী স্টার সিটি’ ভবনে ফ্ল্যাট, স্বামীবাগে ‘স্বর্ণচাপা’ ভবনে যৌথ মালিকানাধীন ফ্ল্যাট, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে ‘নন্দন জুয়েলার্স’ নামে স্বর্ণের দোকান রয়েছে।

সিআইডি জানায়, শ্যাম ঘোষের ক্রোক করা সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে গ্রহণকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান ও অর্থ পাচার মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ